ঢাকা: রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের পাইকারি পোশাকপল্লীতে জমে উঠেছে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা। সব বয়সের মানুষের জন্য নানা রকম শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব বস্ত্র কেনার জন্য আসতে শুরু করেছেন। বিক্রিও হচ্ছে দেদার।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি বছর শীতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার ব্যবসা ভালো হবে। কারণ গ্রাম থেকে শহরে নিজ নিজ দলের প্রার্থীর জন্য দিনরাত নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকবে অধিকাংশ মানুষ। আর বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হবে। আবার নির্বাচনের প্রার্থীরা
ভোটারদের মন পেতে শীতবস্ত্র বিতরণ বাড়িয়ে দেবেন। তাই গরম কাপড়ের কদর বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে বিক্রিও ভালো হবে বলে আশা করছেন তারা।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শেখ কাওসার বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা শীত বাজার ধরতে প্রস্তুতি শেষ করেছে। এর মধ্যে শীত পোশাক তৈরি করে পাইকারি দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো হয়েছে। বিক্রিও শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবার শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে শীত যদি একটু বেশি পড়ে, তবে বিক্রি আরও বেড়ে যাবে। আর এবারের শীতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় বিক্রিবাট্টা বাড়বে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার প্রত্যেকটি দোকানে শীত পোশাক বিক্রিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দোকান মালিকরা। স্থানীয় কারখানায় তৈরি ও দেশের বাইরের থেকে আমদানি করা শীত পোশাক ঝুলিয়ে ও থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানের কর্মচারীরা।
ক্রেতা আসলে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক দেখাচ্ছেন দোকানিরা। ক্রেতাদের পছন্দ হলে কিনছেন। সেখানে মেয়েদের কার্ডিগান ও ছেলেদের জন্য সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। দাম ও মানে ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ সময় এসব বস্ত্র কিনতে ভিড় করতে শুরু করেছেন খুচরা বিক্রেতারা।
পূর্ব আগানগর আলম টাওয়ারের জারিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শামীম আহমেদ বলেন, শীতবস্ত্র বিক্রির জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। দোকানে বিভিন্ন ধরনের দেশি ও বিদেশি শীত পোশাক উঠিয়েছি। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসতে শুরু করেছে। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। আর এ শীতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় এ ধরনের পোশাকের কদরও বাড়বে অনেক। এ জন্য সব কিছু চিন্তা করে খুচরা বিক্রেতারা এবার বেশি করে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন।
একই মার্কেটের সিফাত ট্রেডার্সের মালিক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সারা দেশে আস্তে আস্তে শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। এ কারণে পাইকারি ক্রেতারাও আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে আমরা আরও ক্রেতার অপেক্ষায় আছি। তারা আসলেই জমজমাট হয়ে উঠবে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী।
বাগেরহাট থেকে আসা পোশাক ব্যবসায়ী শরীফ আহমেদ বলেন, দেশের প্রত্যেকটি ধর্মীয় উৎসব ও শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে বিক্রি করেন। এবারও শীতকে ঘিরে পোশাক কিনতে এসেছেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একই স্থানে দেশি ও বিদেশি অনেক ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যায়। কাপড়ের মান অনেক ভালো। ডিজাইনও অনেক চমৎকার। আর সব বয়সের মানুষের জন্য সব ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যায়। ক্রেতারাও এ পোশাকগুলো পছন্দ করে কিনে নেয়। এতে কিছু টাকা লাভ করা যায়। তাই প্রতিবছর এখান থেকেই শীত পোশাক নিয়ে ব্যবসা করি।
সাভার থেকে আসা খুচরা পোশাক ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, পোশাকের মানের তুলনায় দাম কম হওয়ায় প্রতিবছর এখানে শীত পোশাক কিনতে আসেন। পোশাকের সেলাই থেকে শুরু করে কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় মার্কেটে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। আর ক্রেতারাও তাদের পছন্দ অনুযায়ী শীত পোশাক পেয়ে সন্তুষ্ট থাকেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি। এখানকার বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানায় দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া দেশের শীত পোশাকের প্রায় ৭০ শতাংশ কেরানীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না।