আজ আমার বাবার ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী। ২০১৯ সালের দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার ঠিক এমন একটি দিনে বেলা ১০.৩০ মিনিটে বাবাকে হারাতে হয়েছে। তিনি সেই দিন হাতীবান্ধা সরকারি হাসপাতালে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান, যেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না, কারন ডাক্তার বললেন আপনার বাবাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান, আর এইজন্য আমি বাসায় চলে আসি মুহুর্তের মধ্যে ফোন বেজে উঠলো ফোন রিসিভ করতেই শুনতে পেলাম বাবা অবস্থা ভালো না। মুহুর্তের মধ্যে আমি হাসপাতালে গিয়ে বাবার মাথার কাছে দাড়িয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বলল উনি আর পৃথিবীতে নেই! আর সেদিনেই বুঝেছি বাবাকে হারানোর শোকটা কতটা কষ্টের।
বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আমার বাবা আর নেই। বিশ্বাসই বা হবে কি করে প্রতিদিনের মত সেদিন সকালে উঠে আমার অনলাইন নিউজ পোর্টাল newsbijoy24.com নিউজ আপলোড করছিলাম হঠাৎ বাবা আমাকে বলল ফারুক আমার নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে । ঔষধ আনতে হবে। তাই আমি ছুটে গেলাম ঔষধের দোকানে। ঔষধ এনে দিলাম কিন্তু ঔষধ নেবার পরেও কোন কাজ হচ্ছে না তখন বাবা বললেন আমার ছোট ভাই ফজলু কোথায় ওকে ডাক, আর আমাকে আমতলা বাজারে আশরাফ প্রফেসরের ছেলে ডাক্তার ওর কাছে নিয়ে চল। ওনার কথা অনুযায়ী তাৎক্ষণিক রিক্সা যোগে বাবাকে নিয়ে এলাম ডা.তৌফিকের চেম্বারে। সেখানে ডা. তৌফিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেন। কিছুক্ষণ দেখে কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করলেন তাতেও কোন কাজ হলোনা। সেই মুহূর্তে আমার বাবা শুধু ঘামছে আর ঘামছে শরীর দিয়ে ফোটায় ফোটায় পানি ঝরছে। তখন ডাক্তার তৌফিক বললেন দাদাকে মেডিকেলে নিয়ে যান। এর পর বাবাকে অটো রিকশা করে হাতীবান্ধা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম সেখান কার কর্মরত ডাক্তার তাকে দেখার সাথে সাথে অক্সিজেন দিলেন। তার পর কর্মরত ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন আপনার বাবাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
আর এইজন্য আমি বাসায় চলে টাকা নেওয়ার জন্য আশার মুহুর্তের মধ্যে ফোন বেজে উঠলো ফোন রিসিভ করতেই শুনতে পেলাম বাবা অবস্থা ভালো না। তাই আর দেরী না করে মুহুর্তের মধ্যে আমি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বলল উনি আর পৃথিবীতে নেই। আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না যে, আমি সকালেই বাসায় বাবাকে ঔষধ খাওয়ালাম। সেই সময়টা মনে পড়লে দমবন্ধ হয়ে আসে । বাবাকে হারিয়ে আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। ওই দিন বিকাল সাড়ে পাচঁটার সময় ১ম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিন শুক্রবার ২য় জানাযা সকাল ৯টা ৩০মিনিটে অনুষ্টিত হয়। তাকে জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
আজ বাবার সাথে পথ চলার সময় গুলো অনুভব করছি, চলার জীবনে বাবার ছায়াতেই বড় হয়েছি, মনে পরে কত দিন যে, বাবার কাঁধে চড়ে দোকান থেকে বাসায় গিয়েছি তার হিসেব নেই। বাবার ভালোবাসা, বাবার স্নেহ, বাবার আদর আজও আমার স্মৃতিতে সতেজ হয়ে ভাসে। আজ বাবাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিলো বাবার সাথে আমার অনেক কথা বলার ছিলো আমি বলতে পারিনি তাই মনের লুকানো কথাগুলো আজও কারো সাথে ভাগাভাগি করতে পারিনি। যাদের বাবা আছে তারা জানেনা বাবার ছায়াটা কতটা তার সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । বাবাহীন পৃথিবীটা বেশ অদ্ভুত ! যাদের বাবা নেই তারা কেবল জানেন বাবার অনুপস্থিতিটা কেমন । এক সময় বাবার বুদ্ধিছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া যেতো না, আর আজ বাবাকে ছাড়া চলতে হচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত ।
বুদ্ধিহীন অবস্থায় চলতে হচ্ছে এই অচেনা জীবন শহরতলীতে। কিন্তু বাবার সেই স্মৃতি বাবার সেই উপদেশমূলক কথাগুলো আজও আমার অন্তরকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায়! বেশ কিছু আশা,স্বপ্ন ,কাজ অপূর্ণ থেকে গেল আমার, সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন । আল্লাহতা’আলা তাকে যেন বেহেশত নসিব করেন।
নিউজবিজয়২৪.কম / ছেলে মো. ফারুক হোসেন
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
E-mail :- [email protected] । E-mail :- [email protected] মোবাইল- +৮৮০১৭১৩-৬৩৬৬৬১ । বার্তা বিভাগ :- +০১৭১৬-৯৮০০৮৮ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত NewsBijoy24.Com - Popular Online Newspaper of Bangladesh.