এক সময়ের অচেনা হাসপাতালকে সবার কাছে পরিচিত এবং স্বাস্থ্য সেবায় আমূল পরিবর্তন করে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌফিক আহমেদ। হঠাৎ এ কর্মকর্তার বদলি মিনে নিতে পারছেন না হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সম্প্রতি তার বদলি আদেশ দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তারা এ কর্মকর্তার বদলি বাতিল করে স্বপদে বহাল রাখার জোর দাবী করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকসহ প্রশাসনের উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল সমাজ ও শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর স্বাক্ষরিত একটি আবেদন মহা-পরিচালকের নিকট পাঠিয়েছেন। যার অনুলিপি সমাজকল্যাণ মন্ত্রীসহ প্রশাসনের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
জানাগেছে, ডাঃ তৌফিক আহমেদ এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর হতে হাসপাতালকে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। সেই সাথে রোগিদের জন্য খাবারের মান,ঔষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করে সেবার মানবাড়িয়ে ও হাসপাতালে পরিস্কার পরিছন্নতা এমন কি পুরো পরিবেশ পাল্টে দিয়েছেন।
তাছাড়া তিনি হাসপাতাল, আবাসিক কোয়ার্টারের সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি, রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধপাতির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, রোগীদের পথ্যের উন্নয়ন, এসি এ্যাম্বুলেন্স এর সংস্থান করা, গ্যারেজ নির্মান, লেবার ওয়ার্ড নির্মান, আধুনিক কনফারেন্স রুম, অফিস রুম, হাসপাতালের যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুরো হাসপাতাল ও আবাসিক কোয়ার্টারে পর্যাপ্ত আলোক ব্যবস্থা করেছেন।
তিনি সার্বক্ষণিক হাসপাতালের ক্যাম্পাসে অবস্থান করে পুরো ক্যাম্পাসকে এবং ক্যাম্পাসের আবাসিকদের নিজ পরিবারের মতো আগলে রেখেছেন।
এক সময় হাসপাতালটি ভূতুড়ে অবস্থা ও মাদকসেবীদের আস্তানা ছিল। সেবার মান নিয়ে হাজারও প্রশ্ন ছিল এলাকাবাসীর। তিনি যোগদানের পর থেকে পাল্টাতে থাকে এসব চিত্র। কিন্তু একটি চক্র এ কর্মকর্তার নিকট অবৈধ সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় চক্রটি এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নানাধরনের হয়রানী করেই আসছেন।
এদিকে সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, একসময় হাসপাতালের প্রশাসন শাখায় সেবা গ্রহনে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। সেই সাথে হেনস্তারও শিকার হতে হত। এখন প্রশাসন সেবায় গতিশীলতার পাশাপাশি স্টাফদের জিম্মি করে তাদের নিকট হতে সকল প্রকার অবৈধ লেনদেন প্রক্রিয়া বন্ধ করেছেন।
আদিতমারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ এনামুল হক বলেন, বিগত বছর গুলোতে যারা বিভিন্ন রকমের অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিত তারা সেগুলো থেকে বঞ্চিত হওয়ায় একটি চক্র কিছুদিন যাবত হাসপাতালটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। তিনি আরো বলেন, এ চক্রটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে হাসপাতালের সেবার মান ঠিক রাখাই কাল হয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা। তিনি এ কর্মকর্তার বদলী বাতিল করে স্বপদে বহাল রাখার দাবী জানান।
আদিতমারী হাসপাতালের অফিস সহায়ক শফিক সুজা ও মাইদুল ইসলাম বলেন, অপশক্তির হাত থেকে আমাদের স্যারের বিরুদ্ধে স্থানীয় গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহলকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করে আসছেন। তারা আরো বলেন, তাকে বদলী করা হলে আমরা স্থানীয়ভাবে অভিভাবকহীন হয়ে যাব। একই সাথে প্রশাসনিক সেবাতেও আমরা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হব। তাই তারা দ্রুত এ কর্মকর্তার বদলী বাতিল করে স্বপদে বহাল রাখার জন্য জোর দাবী জানান।
হাসপাতালের কর্মরত ফার্মাসিস্ট মাহফুজ আলম জোর দাবী করে বলেন, আবাসিক কোয়ার্টারে থাকা থেকে শুরু করে বেতন ভাতা, বিভিন্ন প্রকার বিল, প্রশিক্ষণ ভাতা, ভ্রমন ভাতা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই জটিলতার আশংকা করছি। তিনিও এ কর্মকর্তার বদলী বাতিল দাবি করেন।
এদিকে ডাঃ তৌফিক আহমেদ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে পুরো উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের জনগনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে এই হাসপাতালকে একটি মডেল হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ মোল্লা বলেন, আমার দেখা এবং জানামতে ডাঃ তৌফিক একজন ভাল মানুষ। তার হাত ধরে হাসপাতালের সেবার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি এ কর্মকর্তার বদলি বাতিল করে স্বপদে বহাল রাখার জোর দাবী করেন।
আদিতমারী হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌফিক আহমেদ বলেন, চাকুরী করলে বদলী হবে এটাই নিয়ম। তিনি আরো বলেন, এখানকার একটি চক্র হাসপাতালটির পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য সবসময় লেগেই আছেন। আর এ চক্রটির কারণে অনেক ভাল কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও তা সম্ভব হয়না। তিনি আরো বলেন, চেয়েছিলাম হাসপাতালটিকে একটি মডেল হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব কিন্তু মনে হয় আর সম্ভব হচ্ছে না।