ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদ মোবারক

বীরগঞ্জে কৃষকের ভরসা ‘কেঁচো মানিক’

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শিয়ালখেদা গ্রামে বাড়ী কেঁচো মানিকের। ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত ছিলেন। ২০০৪ সালে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কেঁচোসার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। পরে বাসায় কয়েকটি টবে কেঁচো আর গোবরের মিশ্রণে সার তৈরি শুরু করেন। এরপর টব থেকে চাড়ি, চাড়ি থেকে রিং—সর্বশেষ বাড়িসংলগ্ন ৪০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘সবুজ স্বপ্ন অ্যাগ্রো ফার্ম’। সাত থেকে আটজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন খামারে। প্রতি মাসে উৎপাদিত হয় প্রায় ৫০ টন কেঁচোসার। প্রতি কেজি সার বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে। মানিক বর্মা বলেন, প্রতি টন সার প্রস্তুত করতে ১০ কেজি কেঁচো দরকার। ৩০ দিন পর এর থেকে পাওয়া যায় ৭৫০ কেজি সার। সাধারণত কেঁচোর আয়ুষ্কাল ৯৫ দিন। এ সময়ে দুবার গড়ে চারটি করে ডিম দেয়। ফলদ গাছ বা উঁচু জমির ফসলে পরপর তিনবার এ সার ব্যবহার করলে ডিম থেকে উৎপন্ন কেঁচো ওই স্থানে নিজে থেকেই সার উৎপাদন করতে থাকে। ফলে পরবর্তী দু-তিনটি ফসলে সার ব্যবহার না করলেও চলে।জমিতে কেঁচোসার ব্যবহারে বিঘাপ্রতি অন্তত ৩০০ টাকা সাশ্রয় হয় বলে জানিয়েছেন বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান। এ সারে গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের ১০টিই বিদ্যমান।কৃষি বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কৃষক—সবাই জানেন মানিকের খামারের খবর। এ ক্ষেত্রে তাঁর নামের সামনে যুক্ত হয়ে গেছে ‘কেঁচো’ শব্দটি। মানিক বর্মা হয়ে উঠেছেন ‘কেঁচো মানিক’।এ নাম শুনলে আনন্দ পান জানিয়ে মানিক বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেঁচোসার প্রস্তুতকারী প্রায় সবাই চেনেন তাঁকে। এএলআরডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হয়ে ৪০টিরও বেশি জেলায় কেঁচোসারের গুণাবলি ও প্রস্তুতপ্রণালি বিষয়ে দুই সহস্রাধিক উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মানিকের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন কেউ কেউ। সার বিক্রির আয়ে সম্প্রতি পাকা বাড়ি ও গরুর খামারের শেড নির্মাণ শুরু করেছেন মানিক বর্মা।মানিকের খামারে কেঁচোসার কিনতে আসা কয়েক কৃষক জানিয়েছেন, এ সার ব্যবহারের ফলে জমিতে রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করতে হচ্ছে। মানিকের কাছে নিয়মিত সার কেনেন মুসলিম পাটোয়ারি। তিনি বলেন, এবার ৪০ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করছেন। ইতিমধ্যে ৩৫ টন কেঁচোসার কিনেছেন মানিকের কাছ থেকে। এ সার ব্যবহারে ফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড় কম হয়।জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুরে দুই শতাধিক উদ্যোক্তা কেঁচো চাষের যুক্ত রয়েছেন। গত অর্থবছরে জেলায় কেঁচোসারের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন।হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মুক্তাদুল বারী বলেন, জমিতে দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় মাটির ছোট ছোট অণুজীব মারা যায়; সেখানে কেঁচোসার অণুজীবগুলো সক্রিয় রাখে। ফলন বাড়াতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন আছে। তবে পাশাপাশি কেঁচোসারও প্রয়োজন।

নিউজবিজয়/এফএইচএন

 

 

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

চলতি মাসে তিন দফায় রেকর্ডর পর কিছুটা কমলো স্বর্ণের দাম

বীরগঞ্জে কৃষকের ভরসা ‘কেঁচো মানিক’

প্রকাশিত সময় :- ০৭:৪২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শিয়ালখেদা গ্রামে বাড়ী কেঁচো মানিকের। ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত ছিলেন। ২০০৪ সালে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কেঁচোসার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। পরে বাসায় কয়েকটি টবে কেঁচো আর গোবরের মিশ্রণে সার তৈরি শুরু করেন। এরপর টব থেকে চাড়ি, চাড়ি থেকে রিং—সর্বশেষ বাড়িসংলগ্ন ৪০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘সবুজ স্বপ্ন অ্যাগ্রো ফার্ম’। সাত থেকে আটজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন খামারে। প্রতি মাসে উৎপাদিত হয় প্রায় ৫০ টন কেঁচোসার। প্রতি কেজি সার বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে। মানিক বর্মা বলেন, প্রতি টন সার প্রস্তুত করতে ১০ কেজি কেঁচো দরকার। ৩০ দিন পর এর থেকে পাওয়া যায় ৭৫০ কেজি সার। সাধারণত কেঁচোর আয়ুষ্কাল ৯৫ দিন। এ সময়ে দুবার গড়ে চারটি করে ডিম দেয়। ফলদ গাছ বা উঁচু জমির ফসলে পরপর তিনবার এ সার ব্যবহার করলে ডিম থেকে উৎপন্ন কেঁচো ওই স্থানে নিজে থেকেই সার উৎপাদন করতে থাকে। ফলে পরবর্তী দু-তিনটি ফসলে সার ব্যবহার না করলেও চলে।জমিতে কেঁচোসার ব্যবহারে বিঘাপ্রতি অন্তত ৩০০ টাকা সাশ্রয় হয় বলে জানিয়েছেন বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান। এ সারে গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের ১০টিই বিদ্যমান।কৃষি বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কৃষক—সবাই জানেন মানিকের খামারের খবর। এ ক্ষেত্রে তাঁর নামের সামনে যুক্ত হয়ে গেছে ‘কেঁচো’ শব্দটি। মানিক বর্মা হয়ে উঠেছেন ‘কেঁচো মানিক’।এ নাম শুনলে আনন্দ পান জানিয়ে মানিক বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেঁচোসার প্রস্তুতকারী প্রায় সবাই চেনেন তাঁকে। এএলআরডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হয়ে ৪০টিরও বেশি জেলায় কেঁচোসারের গুণাবলি ও প্রস্তুতপ্রণালি বিষয়ে দুই সহস্রাধিক উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মানিকের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন কেউ কেউ। সার বিক্রির আয়ে সম্প্রতি পাকা বাড়ি ও গরুর খামারের শেড নির্মাণ শুরু করেছেন মানিক বর্মা।মানিকের খামারে কেঁচোসার কিনতে আসা কয়েক কৃষক জানিয়েছেন, এ সার ব্যবহারের ফলে জমিতে রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করতে হচ্ছে। মানিকের কাছে নিয়মিত সার কেনেন মুসলিম পাটোয়ারি। তিনি বলেন, এবার ৪০ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করছেন। ইতিমধ্যে ৩৫ টন কেঁচোসার কিনেছেন মানিকের কাছ থেকে। এ সার ব্যবহারে ফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড় কম হয়।জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুরে দুই শতাধিক উদ্যোক্তা কেঁচো চাষের যুক্ত রয়েছেন। গত অর্থবছরে জেলায় কেঁচোসারের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন।হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মুক্তাদুল বারী বলেন, জমিতে দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় মাটির ছোট ছোট অণুজীব মারা যায়; সেখানে কেঁচোসার অণুজীবগুলো সক্রিয় রাখে। ফলন বাড়াতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন আছে। তবে পাশাপাশি কেঁচোসারও প্রয়োজন।

নিউজবিজয়/এফএইচএন